রাতকানা রোগ কেন হয়-রাতকানা রোগের প্রতিকার কি বিস্তারিত
রাতকানা রোগ কেন হয় এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আমাদের অনেকে আছে যারা
রাতকানা রোগে ভুগছে। অনেকে এই রাতকানা রোগের কারণে, নিজেদের প্রাণ ঝুঁকিতে
রাখছে। আজ আমরা জানবো কিভাবে রাতকানা রোগ হয় এবং রাতকানা রোগ থেকে কিভাবে
বাঁচা যায়। আজকের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে এর জন্য অবশ্যই আপনারা
খুব মনোযোগ সহকারে পড়বে।
পোস্টটি শুরু করার আগে সবাইকে একটি অনুরোধ হচ্ছে অবশ্যই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে
শেষ পর্যন্ত পড়বে। কারণ অনেকে আছে শুধুমাত্র অল্প একটু পরে চলে যায়, এর কারণে
অনেক সময় তারা বুঝতে অসুবিধা হয় বাট তাদের প্রয়োগে অনেক সমস্যা হয়। তাই
অবশ্যই সবাই শেষ পর্যন্ত পড়বে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক আছে যেগুলো আপনারা
জানতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাক, নিচে আপনাদেরকে পড়ার জন্য পেট সূচিপত্র
তৈরি করে রাখা হলো।
পেজ সূচিপত্র:রাতকানা রোগ কেন হয়
- রাতকানা রোগ কেন হয়
- রাতকানা রোগের সাধারণ লক্ষণ
- ভিটামিন এ এর ঘাটতি ও রাতকানা
- বংশগত কারণ ও চোখের রোগ
- শিশুদের মধ্যে রাতকানা হওয়ার ঝুঁকি
- গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে রাতকানা
- রাতকানা রোগ নির্ণয়ের উপায়
- প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি
- চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট
- রাতকানা এড়াতে সচেতনতা ও জীবনধারা
- শেষ কথা:রাতকানা রোগ কেন হয়
রাতকানা রোগ কেন হয়
রাতকানা বা নাইট ব্লাইন্ডনেস এমন একটি চোখের সমস্যা যেখানে অন্ধকারে বা
কম আলোতে স্পষ্টভাবে দেখা কঠিন হয়ে যায়। এই রোগের মূল কারণ হলো ভিটামিন
এ-এর ঘাটতি। ভিটামিন এ চোখের রেটিনায় থাকা রড সেলের কার্যক্রম সচল রাখে,
যা অন্ধকারে দেখার ক্ষমতার জন্য দায়ী। যখন শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ
থাকে না, তখন রড সেল দুর্বল হয়ে যায় এবং চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টি ক্ষমতা
নষ্ট হতে শুরু করে।
শুধু পুষ্টিহীনতা নয়, আরও কিছু কারণেও রাতকানা হতে পারে। যেমন—বংশগত
দৃষ্টি সমস্যা, দীর্ঘদিন ধরে চোখের প্রদাহ বা ইনফেকশন থাকা, কর্নিয়ার
ক্ষতি, বা কিছু লিভারের সমস্যাও এই রোগের জন্য দায়ী হতে পারে। অনেক সময়
গর্ভবতী নারী ও শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়, কারণ তাদের
শরীরে ভিটামিন এ-এর চাহিদা তুলনামূলক বেশি। রাতকানা প্রতিরোধে পুষ্টিকর
খাবার খাওয়া সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
গাজর, লাল কুমড়া, পালং শাক, কলিজা, ডিম, দুধ এবং পাকা আমের মতো খাবারে
ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে থাকে। নিয়মিত এসব খাবার খেলে চোখের স্বাস্থ্য
ভালো থাকে এবং রাতকানা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া, দীর্ঘদিন চোখে
সমস্যা থাকলে দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দ্রুত
চিকিৎসা শুরু করলে এই রোগ থেকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হওয়া সম্ভব। তো
আপনারা বুঝতে পেরেছেন রাতকানা রোগ কেন হয়, তো চলুন এরপর যে মাসে যাক
রাতকানা রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ।
রাতকানা রোগের সাধারণ লক্ষণ
রাতকানা রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ আপনাদের সামনে তুলে ধরা, এসব লক্ষণ যদি
আপনারা দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন রাতকানা রোগ আপনাদেরকে আক্রমণ করেছে। নিজে
রাতকানা রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ ও উল্লেখ্য করা হলো:রাতকানা রোগের মূল
বৈশিষ্ট্য হলো কম আলো বা অন্ধকারে দেখার অসুবিধা। যাদের এই সমস্যা হয়,
তারা রাতে বাইরে বের হলে বা হালকা আলোয় চলাফেরা করলে স্পষ্টভাবে কিছু
দেখতে পারেন না।
এটি সাধারণত চোখের রেটিনার দুর্বলতার কারণে ঘটে, যেখানে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি
বা অন্য চোখের রোগের প্রভাব থাকে। প্রাথমিকভাবে রোগী লক্ষ্য করে যে দিনের
বেলা দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে, কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই সবকিছু ঝাপসা বা অন্ধকার
দেখায়। রাতকানার আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হলো, আলো থেকে অন্ধকারে বা অন্ধকার
থেকে আলোতে চোখের মানিয়ে নিতে বেশি সময় লাগা। যেমন—উজ্জ্বল জায়গা থেকে
হঠাৎ অন্ধকার ঘরে ঢুকলে কিছু সময় কিছুই দেখা যায় না।
অনেক সময় গাড়ির হেডলাইট বা তীব্র আলোয় চোখে অস্বস্তি হয় এবং আলো ঝলমলে মনে
হয়। কিছু ক্ষেত্রে রোগী দূরের বস্তু স্পষ্টভাবে দেখতে পারে না বা রঙের
পার্থক্য বুঝতে সমস্যা হয়। শিশুদের মধ্যে রাতকানার লক্ষণ একটু ভিন্ন হতে
পারে। তারা সন্ধ্যার পর খেলতে যেতে চায় না বা অন্ধকারে হাঁটার সময় পড়ে যায়।
এসব লক্ষণ দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চোখের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নেওয়া উচিত। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে সহজেই নিয়ন্ত্রণে
আনা সম্ভব। সচেতনতা এবং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ
খাবার গ্রহণ, রাতকানা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন এ এর ঘাটতি ও রাতকানা
ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি
উপাদান। এটি চোখের রেটিনায় থাকা “রড সেল” নামক কোষগুলিকে সক্রিয়
রাখে, যা অন্ধকারে দেখার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন শরীরে পর্যাপ্ত
ভিটামিন এ থাকে না, তখন এই কোষগুলির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং ধীরে
ধীরে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। ফলস্বরূপ মানুষ রাতের বেলায় বা
অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা বোধ করে, যাকে বলা হয় রাতকানা বা নাইট
ব্লাইন্ডনেস।
ভিটামিন এ-এর ঘাটতি মূলত অপুষ্টির কারণে হয়। বিশেষ করে যেসব মানুষ
নিয়মিত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন গাজর, কলিজা, পাকা আম, লাল কুমড়া,
ডিম বা দুধ খান না, তাদের মধ্যে এই ঘাটতি দেখা দেয়। শিশু ও গর্ভবতী
নারীদের মধ্যে এই সমস্যা তুলনামূলক বেশি, কারণ তাদের শরীরে পুষ্টির
চাহিদা সাধারণের তুলনায় বেশি থাকে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া,
লিভারের রোগ, বা ফ্যাট শোষণে সমস্যা থাকলেও শরীরে ভিটামিন এ ঠিকভাবে
শোষিত হয় না, যা পরবর্তীতে রাতকানার ঝুঁকি বাড়ায়।
রাতকানা শুধু দৃষ্টিশক্তি কমায় না, এটি চোখের অন্যান্য সমস্যারও সূচনা
করতে পারে। যেমন—চোখের শুষ্কতা, কর্নিয়া ক্ষয়, এমনকি স্থায়ী
অন্ধত্বের ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই ভিটামিন এ-এর ঘাটতি পূরণ করা খুবই
জরুরি। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রাণিজ খাদ্য
অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশেষ করে গাজর, পালং শাক, কলিজা, ডিমের কুসুম
এবং দুধ চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
যদি লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়, যেমন রাতের বেলা ঝাপসা দেখা, আলো থেকে
অন্ধকারে মানিয়ে নিতে দেরি হওয়া, তাহলে দ্রুত চোখের ডাক্তার দেখানো
উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসক ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন, যা চোখের
স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, সচেতনতা, এবং
প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণই পারে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি ও রাতকানা
সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দিতে।
বংশগত কারণ ও চোখের রোগ
অনেক সময় রাতকানা রোগ বংশগত কারণেও হয়ে থাকে।চোখের অনেক রোগই বংশগত বা
জিনগত কারণে হয়ে থাকে। অর্থাৎ, কোনো পরিবারের কারও চোখের সমস্যা থাকলে তা
পরবর্তী প্রজন্মেও দেখা দিতে পারে। জেনেটিক বা বংশগত প্রভাব চোখের গঠন ও
কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে নানা ধরনের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
তৈরি হয়। রাতকানা রোগও এর মধ্যে একটি।
যদি পরিবারের কারও রেটিনার সমস্যা বা দৃষ্টিশক্তি দুর্বলতার ইতিহাস থাকে,
তবে সন্তানদের মধ্যেও একই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। রেটিনাইটিস
পিগমেন্টোসা (Retinitis Pigmentosa) নামের একটি বংশগত রোগ এর ভালো
উদাহরণ, যা ধীরে ধীরে রাতের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট করে দেয়। শুরুতে অন্ধকারে
দেখার সমস্যা হয়, পরে এটি স্থায়ী দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের দিকে নিয়ে যেতে
পারে।
এছাড়া, বংশগত ছানি, গ্লুকোমা (চাপজনিত চোখের রোগ) কিংবা রঙ অন্ধত্বের মতো
সমস্যা অনেক সময় প্রজন্ম ধরে চলতে থাকে। বংশগত চোখের রোগ প্রতিরোধ করা
কঠিন হলেও সচেতনতা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা অনেকটাই সহায়ক।
পরিবারের কারও মধ্যে চোখের গুরুতর সমস্যা থাকলে শিশুর চোখ ছোটবেলা থেকেই
পরীক্ষা করানো উচিত।
পাশাপাশি, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, চোখের সঠিক যত্ন নেওয়া এবং নিয়মিত
চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। জিনগত কারণ সম্পূর্ণভাবে
এড়ানো না গেলেও, দ্রুত রোগ শনাক্ত ও সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে চোখের ক্ষতি
অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। তাই চোখের যত্নে সতর্ক থাকা ও পারিবারিক ইতিহাস
জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের মধ্যে রাতকানা হওয়ার ঝুঁকি
শিশুদের মধ্যে রাতকানা বা নাইট ব্লাইন্ডনেস একটি গুরুত্বপূর্ণ
স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সাধারণত ভিটামিন এ-এর ঘাটতির কারণে ঘটে। ভিটামিন
এ শিশুর চোখের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, রেটিনার সঠিক কাজকর্ম এবং দৃষ্টিশক্তি
রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু অনেক শিশুর খাদ্যতালিকায় এই
পুষ্টি উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে থাকে না, যার ফলে তাদের রাতের বেলা বা কম
আলোতে দেখার ক্ষমতা কমে যায়।
এটি শুধু দৃষ্টিশক্তির সমস্যা নয়, বরং সার্বিক শারীরিক বিকাশেও প্রভাব
ফেলে। বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে এখনো অনেক শিশুই পুষ্টিহীনতায়
ভোগে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত দুধ, ডিম, কলিজা, গাজর, লাল কুমড়া বা
পাকা আম খায় না, তাদের শরীরে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি দেখা দেয়। এর পাশাপাশি
দীর্ঘদিনের ডায়রিয়া, অপুষ্টি বা লিভারের সমস্যা থাকলে শরীর ঠিকভাবে
ভিটামিন এ শোষণ করতে পারে না, যা রাতকানার ঝুঁকি আরও বাড়ায়।
অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা দিনের বেলা ঠিকভাবে দেখতে পারলেও, সন্ধ্যা নামার
পর বা আলো কমে গেলে ঠিকমতো দেখতে পারে না। তারা বারবার হোঁচট খায়,
অন্ধকারে চলাফেরা করতে ভয় পায়, কিংবা রাতের পড়াশোনায় সমস্যায় পড়ে। এই
লক্ষণগুলো দেখা দিলে অভিভাবকদের অবহেলা করা উচিত নয়। যত দ্রুত সম্ভব
শিশুকে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করতে পারলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার এবং
সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে রাতকানা সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। শিশুদের
রাতকানা প্রতিরোধে সচেতন খাদ্যাভ্যাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের
খাদ্যতালিকায় গাজর, পালং শাক, কলিজা, ডিম, দুধ এবং ফলমূল রাখলে
ভিটামিন এ-এর ঘাটতি পূরণ হয়। এছাড়া, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে
নির্ধারিত সময়ে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোও জরুরি। সচেতন অভিভাবকত্ব
এবং সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারলে শিশুদের রাতকানা থেকে সম্পূর্ণভাবে
রক্ষা করা সম্ভব।
গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে রাতকানা
গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে রাতকানা বা নাইট ব্লাইন্ডনেস একটি সাধারণ
কিন্তু গুরুত্বসহকারে দেখার মতো সমস্যা। এই অবস্থায় মায়েরা অন্ধকারে
বা কম আলোতে স্পষ্টভাবে দেখতে পারেন না। প্রধান কারণ হলো শরীরে ভিটামিন
এ-এর ঘাটতি, যা চোখের রেটিনায় থাকা “রড সেল” নামক কোষগুলির
কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে পুষ্টির চাহিদা
বেড়ে যায়, কারণ তাঁকে নিজের পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টির চাহিদাও
পূরণ করতে হয়।
যদি খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ভিটামিন এ না থাকে, তাহলে রাতকানার ঝুঁকি
দ্রুত বেড়ে যায়। ভিটামিন এ শুধু চোখের জন্য নয়, শিশুর বৃদ্ধি,
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও ত্বক ও কোষের সুরক্ষার জন্যও অপরিহার্য। গর্ভবতী
নারীর শরীরে এই ভিটামিনের ঘাটতি হলে চোখের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়,
অন্ধকারে দেখতে সমস্যা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে চোখের ক্ষতি হতে পারে।
অনেক সময় এটি শিশুর মধ্যেও প্রভাব ফেলে, যেমন জন্মের পর চোখের
দুর্বলতা বা কম ওজন।
এছাড়াও, অপুষ্টি, অল্পবয়সে গর্ভধারণ, বা পর্যাপ্ত খাবার না খাওয়াও
রাতকানার ঝুঁকি বাড়ায়। গর্ভবতী অবস্থায় রাতকানা প্রতিরোধের মূল
উপায় হলো সুষম খাদ্য গ্রহণ। প্রতিদিনের খাবারে গাজর, পাকা আম, কলিজা,
ডিম, দুধ, পালং শাক ও লাল কুমড়ার মতো ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার রাখা
উচিত। তবে অতিরিক্ত ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণও ক্ষতিকর হতে পারে,
তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। যদি রাতে ঝাপসা
দেখা, চোখে শুষ্কতা বা অন্ধকারে চলাফেরায় অসুবিধা দেখা দেয়, তাহলে
দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক চিকিৎসা, পুষ্টিকর
খাদ্য ও নিয়মিত যত্নের মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েরা সহজেই রাতকানা থেকে
মুক্ত থাকতে পারেন এবং নিজেদের ও গর্ভস্থ শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত
করতে পারেন।
রাতকানা রোগ নির্ণয়ের উপায়
রাতকানা রোগ বা নাইট ব্লাইন্ডনেস নির্ণয়ের জন্য সঠিকভাবে চোখের
পরীক্ষা করা জরুরি। সাধারণত রোগী নিজেই প্রথমে বুঝতে পারেন যে অন্ধকারে
বা কম আলোয় স্পষ্টভাবে দেখতে অসুবিধা হচ্ছে। এই পর্যবেক্ষণই চিকিৎসকের
কাছে প্রাথমিক তথ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এরপর চোখের
বিশেষজ্ঞ কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেন রোগটি আসলেই রাতকানা
কি না, নাকি অন্য কোনো চোখের রোগের কারণে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়েছে।
আরো পড়ুন:খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
প্রথমে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা (Vision Test) করা হয়, যেখানে আলো এবং
অন্ধকারে চোখের প্রতিক্রিয়া দেখা হয়। এরপর রেটিনা পরীক্ষা (Retinal
Examination) করা হয়, যা চোখের ভেতরের অংশে কোনো ক্ষতি বা সমস্যা আছে
কিনা তা নির্ণয় করে। অনেক সময় স্লিট ল্যাম্প টেস্ট এবং ফান্ডোস্কোপি
নামক পরীক্ষাও করা হয়, যাতে চোখের রেটিনার অবস্থা স্পষ্টভাবে দেখা
যায়। যদি চিকিৎসক মনে করেন যে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি এর মূল কারণ, তবে
রক্ত পরীক্ষা করে শরীরে ভিটামিন এ-এর পরিমাণ মাপা হয়।
কিছু ক্ষেত্রে রাতকানা বংশগত রোগের কারণে হয় কি না, তা বোঝার জন্য
জিনগত পরীক্ষা (Genetic Test)-ও করা হয়। রাতকানা নির্ণয়ের পর চিকিৎসক
সাধারণত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট বা অন্যান্য
ওষুধের পরামর্শ দেন। সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করলে রোগটি
সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তাই অন্ধকারে ঝাপসা দেখা বা চলাফেরায়
অসুবিধা হলে দেরি না করে চোখের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে
বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি
রাতকানা রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও
পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ। এই রোগের প্রধান কারণ হলো শরীরে ভিটামিন এ-এর
ঘাটতি, যা চোখের রেটিনাকে দুর্বল করে দেয়। তাই প্রতিদিনের খাবারে এমন
উপাদান রাখতে হবে যা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ এবং দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় সহায়ক।
গাজর, লাল কুমড়া, পাকা আম, পালং শাক, কলিজা, ডিম, দুধ ও মাছের তেলে
প্রচুর ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
এসব খাবার নিয়মিত খেলে শরীরে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি পূরণ হয় এবং চোখের
দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক থাকে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী ও বৃদ্ধদের
খাদ্যতালিকায় এসব খাবার থাকা অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় শুধু খাবার
থেকেই পর্যাপ্ত ভিটামিন এ পাওয়া যায় না, তখন চিকিৎসকের পরামর্শে
সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া, অতিরিক্ত তেল-চর্বি, ফাস্টফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া
কমাতে হবে, কারণ এগুলো শরীরের পুষ্টি শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। শরীরে
পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ, নিয়মিত ঘুম এবং চোখের বিশ্রামও চোখের
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সচেতনতা। রাতকানা
প্রতিরোধ শুরু হয় পরিবার থেকেই। ছোটবেলা থেকে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার
খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং চোখের
যত্ন নেওয়া হলে এই রোগ সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাসই
পারে রাতকানা থেকে দূরে রাখতে এবং সুস্থ দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে।
চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট
রাতকানা রোগের মূল কারণ হলো ভিটামিন এ-এর ঘাটতি, তাই এর চিকিৎসায়
প্রথম ধাপই হলো শরীরে সেই ঘাটতি পূরণ করা। চিকিৎসক সাধারণত রোগের
মাত্রা অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের
পরামর্শ দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে শুধুমাত্র খাদ্য পরিবর্তনের
মাধ্যমেই এই সমস্যা অনেকাংশে দূর করা যায়। গাজর, কলিজা, পাকা আম, লাল
কুমড়া, ডিম, দুধ ও মাছের তেল ভিটামিন এ-এর ভালো উৎস, যা নিয়মিত খেলে
চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক থাকে।
তবে অনেক সময় শুধু খাবার থেকেই পর্যাপ্ত ভিটামিন এ পাওয়া সম্ভব হয়
না, বিশেষ করে যাদের অপুষ্টি বা শোষণজনিত সমস্যা আছে। সে ক্ষেত্রে
চিকিৎসক ভিটামিন এ ক্যাপসুল বা সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন। সাধারণত শিশু ও
গর্ভবতী নারীদের জন্য সরকার নির্ধারিত ডোজ অনুযায়ী ভিটামিন এ ক্যাপসুল
খাওয়ানো হয়, যা রাতকানা প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। তবে অতিরিক্ত
ভিটামিন এ গ্রহণও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যেমন মাথাব্যথা, বমি
ভাব বা লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুন:সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয়।
রাতকানা যদি জিনগত কারণে হয়ে থাকে বা রেটিনার স্থায়ী ক্ষতি হয়ে
যায়, তখন সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়, তবে নিয়মিত চিকিৎসা ও যত্নের
মাধ্যমে এর অগ্রগতি থামানো যায়। চিকিৎসক চোখের সুরক্ষার জন্য বিশেষ
ড্রপ বা ওষুধ দিতে পারেন, যা চোখের কোষকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া, রোগীকে জীবনধারার কিছু পরিবর্তন আনতে হয়।
যেমন—চোখের অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া, ধুলোবালি বা
উজ্জ্বল আলো থেকে চোখ রক্ষা করা এবং নিয়মিত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নেওয়া। সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে রাতকানা
সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব। তাই অন্ধকারে ঝাপসা দেখা বা
দৃষ্টিশক্তি দুর্বলতার লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর পদক্ষেপ।
রাতকানা এড়াতে সচেতনতা ও জীবনধারা
রাতকানা বা নাইট ব্লাইন্ডনেস প্রতিরোধে সচেতনতা এবং সঠিক জীবনধারা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য শুধু চিকিৎসা
নয়, দৈনন্দিন অভ্যাস ও খাদ্যাভ্যাসেও বিশেষ নজর দিতে হয়। রাতকানা
মূলত ভিটামিন এ-এর ঘাটতির কারণে হয়, তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার রাখা জরুরি। গাজর, পালং শাক, কলিজা, লাল
কুমড়া, ডিম, দুধ এবং পাকা আম চোখের জন্য বিশেষ উপকারী।
শিশু, গর্ভবতী মা ও বৃদ্ধদের জন্য এই ধরনের খাবার নিয়মিত খাওয়া
অত্যন্ত জরুরি। সঠিক জীবনধারা মানে শুধু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া নয়,
চোখের অতিরিক্ত চাপ এড়ানো, পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া এবং নিয়মিত চোখের
বিশ্রাম দেওয়া। দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনের সামনে থাকা, উজ্জ্বল আলোতে
চোখ ধরা বা খুব অন্ধকারে পড়াশোনা করা চোখের ক্ষতি করতে পারে। তাই কাজ
বা পড়াশোনার সময় নিয়মিত বিরতি নেওয়া উচিত।
পরিবার এবং সমাজের সচেতনতা ও শিক্ষা কেও প্রভাবিত করে। শিশুরা ছোটবেলা
থেকেই পুষ্টিকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে রাতকানা প্রতিরোধে
সক্ষম হয়। এছাড়া, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সময়মতো ভিটামিন এ
ক্যাপসুল খাওয়ানো এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও গুরুত্বপূর্ণ।
সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চললে রাতকানা প্রতিরোধ করা সহজ
হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, চোখের যত্ন এবং প্রাথমিক সতর্কতা মেনে চললে
দৃষ্টিশক্তি সুস্থ থাকে এবং অন্ধকারে চলাফেরা বা রাতে পড়াশোনার সময়
কোনো অসুবিধা হয় না। তাই রাতকানা থেকে মুক্ত থাকতে সবার জন্য এটি একটি
অপরিহার্য জীবনধারা।
শেষ কথা:রাতকানা রোগ কেন হয়
রাতকানা বা নাইট ব্লাইন্ডনেস একটি চোখের সমস্যা, যা কম আলোতে বা
অন্ধকারে দেখতে অসুবিধা সৃষ্টি করে। প্রধানত এটি ঘটে ভিটামিন এ-এর
ঘাটতির কারণে, যা চোখের রেটিনায় থাকা “রড সেল” ঠিকভাবে কাজ করতে না
পারার ফল। শিশু, গর্ভবতী নারী এবং অপুষ্ট শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা
যায়। শুধু ভিটামিন এ-এর অভাব নয়, বংশগত চোখের রোগ, দীর্ঘমেয়াদি
চোখের প্রদাহ বা লিভারের সমস্যা থেকেও রাতকানা হতে পারে।
রাতকানা প্রতিরোধের মূল উপায় হলো সুষম খাদ্যাভ্যাস। গাজর, পালং শাক,
কলিজা, ডিম, দুধ এবং পাকা আমের মতো খাবার ভিটামিন এ দিয়ে চোখকে
শক্তিশালী করে। এছাড়া নিয়মিত চোখের পরীক্ষা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং চোখের
যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করলে রোগটি
সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সচেতনতা, পুষ্টি ও সঠিক জীবনধারার
মাধ্যমে রাতকানা প্রতিরোধ করা যায় এবং সুস্থ দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখা
সম্ভব।



লাইফ ব্লেন্ড আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url