শরীরের ছাতা দূর করার উপায়
শরীরের ছাতা একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর ত্বকজনিত সমস্যা, যা মূলত ছত্রাক
সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ঘাম, অপরিচ্ছন্নতা, ভেজা কাপড় দীর্ঘ সময়
পরা কিংবা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এ রোগ সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে এটি
ছোট লালচে দাগ হিসেবে দেখা দিলেও সময়ের সাথে চুলকানি ও অস্বস্তি বাড়তে পারে।
সঠিক যত্ন ও সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই শরীরের ছাতা
দূর করার উপায় জানা এবং নিয়মিত সতর্কতা মেনে চলা ত্বক সুস্থ রাখার জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।
পোস্টটি শুরু করার আগে আপনাদের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি যে, অবশ্যই পোস্টটি
শেষ পর্যন্ত পড়বেন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সম্পর্কে জানবেন এবং তা
সঠিকভাবে প্রয়োগ করবেন। পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে আপনারা এ পোস্টের
গুরুত্বপূর্ণ সব কথাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং তা প্রয়োগ করতে কোন
অসুবিধা হবে না বা প্রয়োগের পরও কোন অসুবিধা হবে না। আপনাদের সুবিধার্থে
পোষ্টের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো পেজ সূচিপত্র আকারে তুলে ধরা হলো।
পেজ সূচিপত্র:শরীরের ছাতা দূর করার উপায়
- শরীরের ছাতা দূর করার উপায়
- শরীরের ছাতা কী এবং কেন হয়
- শরীরের ছাতার সাধারণ লক্ষণ ও ধরন
- ছাতা সংক্রমণের প্রধান কারণ
- ঘরোয়া উপায়ে শরীরের ছাতা দূর করার পদ্ধতি
- কোন খাবার ছাতা কমাতে সাহায্য করে
- কোন ভুলগুলোর কারণে ছাতা বারবার হয়
- কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি
- শরীরের ছাতা প্রতিরোধে দৈনন্দিন সতর্কতা
- শেষ কথা:শরীরের ছাতা দূর করার উপায়
শরীরের ছাতা দূর করার উপায়
শরীরের ছাতা দূর করার উপায় খোঁজা অনেক মানুষের জন্য খুব স্বাভাবিক একটি
বিষয়, কারণ এই সমস্যা যে কাউকেই ভোগাতে পারে। ঘামাচি ভেবে অনেক সময় মানুষ
এটাকে হালকাভাবে নেয়, কিন্তু আসলে এটি এক ধরনের ছত্রাকজনিত সংক্রমণ যা ধীরে
ধীরে বাড়তে থাকে। গরম আবহাওয়া, বেশি ঘাম, ভেজা কাপড় পরে থাকা, বা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব হলে এই সমস্যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
শরীরের ভাঁজযুক্ত অংশ যেমন বগল, কুঁচকি, কোমর বা ঘাড়ে ছাতা বেশি দেখা যায়।
চুলকানি, জ্বালাপোড়া আর লালচে দাগ দৈনন্দিন কাজকর্মেও বিরক্তি তৈরি করে।
অনেকেই লজ্জার কারণে বা অবহেলায় চিকিৎসা নিতে দেরি করেন, ফলে সমস্যা আরও
জটিল হয়ে ওঠে। বাস্তবে বিষয়টি এত কঠিন কিছু নয়, যদি শুরুতেই সঠিক যত্ন
নেওয়া যায়।
নিয়মিত গোসল, শরীর শুকনো রাখা, পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার আর সচেতন অভ্যাস গড়ে
তুললে ঝুঁকি অনেকটাই কমে। তাই ত্বকের এই সাধারণ সমস্যাকে অবহেলা না করে
শুরু থেকেই সচেতন হওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
শরীরের ছাতা কী এবং কেন হয়
শরীরের ছাতা কী এবং কেন হয় এই প্রশ্নটা অনেকেই করেন, বিশেষ করে যখন হঠাৎ
করে ত্বকে গোল গোল দাগ, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া শুরু হয়। শরীরের ছাতা আসলে
এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ, যা ত্বকের উপরিভাগে বাসা বাঁধে। এই ছত্রাক গরম ও
আর্দ্র পরিবেশে খুব দ্রুত বাড়ে। তাই যাদের বেশি ঘাম হয়, যারা দীর্ঘ সময়
ভেজা কাপড় পরে থাকেন, বা নিয়মিত শরীর ঠিকমতো পরিষ্কার রাখেন না, তাদের
মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
শরীরের বগল, কুঁচকি, উরু, পেটের ভাঁজ কিংবা ঘাড়ের মতো জায়গাগুলো ছাতার জন্য
বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় অন্যের ব্যবহৃত তোয়ালে, কাপড় বা বিছানা ব্যবহার
করলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে ছত্রাক সহজেই
ত্বকে আক্রমণ করে। প্রথমে ছোট লালচে দাগ দেখা দিলেও ধীরে ধীরে সেটি বড় হয়
এবং মাঝখানটা কিছুটা পরিষ্কার মনে হতে পারে।
চুলকানির কারণে অনেকে জায়গাটা চুলকাতে থাকেন, এতে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার
সুযোগ পায়। অনেকেই এটাকে সাধারণ ত্বকের সমস্যা ভেবে অবহেলা করেন বা ভুল
ক্রিম ব্যবহার করেন, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে। আসলে শরীরের ছাতা হওয়ার
পেছনে মূল কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস আর সচেতনতার অভাব। তাই ছাতা কেন হয়
তা বুঝতে পারলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা এড়িয়ে চলা অনেক সহজ হয়ে যায়।
শরীরের ছাতার সাধারণ লক্ষণ ও ধরন
শরীরের ছাতার সাধারণ লক্ষণ ও ধরন সম্পর্কে ধারণা থাকলে এই সমস্যা শুরুতেই
চেনা সহজ হয়। বেশিরভাগ সময় শরীরের ছাতা প্রথমে হালকা লালচে দাগ হিসেবে দেখা
দেয়, যা ধীরে ধীরে গোল বা ডিম্বাকৃতি আকার নেয়। দাগের চারপাশে গাঢ় রং আর
মাঝখানে তুলনামূলক ফিকে ভাব থাকতে পারে। চুলকানি হলো এর সবচেয়ে সাধারণ
লক্ষণ, বিশেষ করে ঘাম হলে বা রাতে এই চুলকানি বেশি বাড়ে।
অনেকের ক্ষেত্রে জ্বালাপোড়া, খসখসে ভাব বা ত্বক উঠে যাওয়ার মতো সমস্যাও
দেখা যায়। শরীরের ছাতার ধরন জায়গাভেদে আলাদা হতে পারে। বগল, কুঁচকি বা উরুর
ভাঁজে হলে দাগগুলো সাধারণত বেশি লাল হয় এবং ছড়ানোর প্রবণতা থাকে। কোমর বা
পেটে হলে পোশাকের ঘষায় সমস্যা আরও বাড়ে।
কখনও কখনও ছাতা ছোট ছোট দাগ আকারে শুরু হয়ে পরে বড় আকার নেয়, আবার কিছু
ক্ষেত্রে একাধিক দাগ একসাথে দেখা যায়। মাথার ত্বক বা দাড়ির আশেপাশে হলে চুল
পড়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অনেকেই এটাকে অ্যালার্জি বা সাধারণ
ফুসকুড়ি ভেবে ভুল করেন, ফলে সঠিক ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়। আসলে শরীরের ছাতার
লক্ষণগুলো বুঝে নেওয়া খুব জরুরি, কারণ ধরন অনুযায়ী যত্ন না নিলে সংক্রমণ
দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ছাতা সংক্রমণের প্রধান কারণ
ছাতা সংক্রমণের প্রধান কারণ বুঝতে গেলে আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসের দিকেই আগে
তাকাতে হয়। এই সমস্যা হঠাৎ করে হয় না, বরং ধীরে ধীরে তৈরি হয় পরিবেশ আর
আচরণের কারণে। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় শরীর বেশি ঘামে, আর সেই ঘাম যদি দীর্ঘ
সময় ত্বকে লেগে থাকে তাহলে ছত্রাক বাড়ার সুযোগ পায়।
অনেকেই কাজের ব্যস্ততায় বা আলসেমিতে ভেজা কাপড় পরে থাকেন, বিশেষ করে
আন্ডারগার্মেন্ট বা ঘাম ধরা পোশাক। এটিই ছাতা সংক্রমণের বড় কারণগুলোর একটি।
পরিষ্কার তোয়ালে ব্যবহার না করা, অন্যের তোয়ালে বা কাপড় ব্যবহার করাও
সংক্রমণ ছড়াতে সাহায্য করে। আবার নিয়মিত গোসল না করা বা গোসলের পর শরীর
ভালোভাবে শুকানো না হলে ত্বকের ভাঁজে আর্দ্রতা জমে থাকে, যা ছত্রাকের জন্য
আদর্শ জায়গা।
যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা, অতিরিক্ত
মানসিক চাপ বা ঘুমের অভাব, তাদের ক্ষেত্রে ছাতা সহজেই আক্রমণ করে। অনেক সময়
ভুল ক্রিম বা স্টেরয়েডযুক্ত মলম নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করলে সংক্রমণ
সাময়িকভাবে চাপা পড়ে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে আরও ছড়িয়ে যায়।
আঁটসাঁট সিনথেটিক কাপড় নিয়মিত পরলেও ত্বক ঠিকমতো বাতাস পায় না, ফলে সমস্যা
বাড়ে। এছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে বা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক না থাকলেও ছাতা
সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মোট কথা, শরীরের ছাতা মূলত অপরিচ্ছন্নতা, ভুল
অভ্যাস আর অসচেতনতার ফল। এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখলে এই ত্বকের সমস্যার ঝুঁকি
অনেকটাই কমানো সম্ভব।
ঘরোয়া উপায়ে শরীরের ছাতা দূর করার পদ্ধতি
ঘরোয়া উপায়ে শরীরের ছাতা দূর করার পদ্ধতি জানতে চান এমন মানুষের সংখ্যা
কম নয়, কারণ অনেকেই শুরুতে প্রাকৃতিকভাবে সমস্যাটা সামলাতে চান। ছাতা হলে
প্রথম কাজ হলো শরীর পরিষ্কার রাখা এবং আক্রান্ত জায়গা সবসময় শুকনো রাখা।
নিয়মিত গোসল করা জরুরি, তবে গোসলের পর তোয়ালে দিয়ে জায়গাটা ভালোভাবে মুছে
নিতে হবে, যেন ভেজাভাব না থাকে।
পরিষ্কার ও ঢিলেঢালা সুতি কাপড় পরলে ত্বক বাতাস পায় এবং ঘাম কম জমে। অনেক
ঘরেই থাকা নিম পাতা বা নিমের পানি ত্বক পরিষ্কারে ব্যবহার করা হয়, কারণ এটি
ত্বক শুষ্ক রাখতে সাহায্য করে। কেউ কেউ কাঁচা রসুন বা হলুদ ব্যবহার করেন,
তবে ব্যবহার করার আগে জায়গাটা পরিষ্কার রাখা জরুরি। নারকেল তেল বা অল্প
পরিমাণে চা গাছের তেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে অনেকের ক্ষেত্রে চুলকানি
কমে।
খাবারের দিকেও নজর দেওয়া দরকার, কারণ অতিরিক্ত চিনি বা ভাজাপোড়া শরীরের
ভেতরে সমস্যা বাড়াতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর ভেতর থেকে পরিষ্কার
থাকে। ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করার সময় ধৈর্য রাখা জরুরি, কারণ এগুলো ধীরে
কাজ করে। একই সঙ্গে তোয়ালে, কাপড় বা বিছানার চাদর আলাদা করে ব্যবহার করলে
সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি কমে।
তবে যদি ছাতা বেশি ছড়িয়ে পড়ে বা দীর্ঘদিন না কমে, তখন ঘরোয়া উপায়ে না
থেমে সঠিক পরামর্শ নেওয়াই ভালো। শুরুতে যত্ন নিলে অনেক সময় এই ত্বকের
সমস্যাকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
কোন খাবার ছাতা কমাতে সাহায্য করে
কোন খাবার ছাতা কমাতে সাহায্য করে এই বিষয়টি অনেকেই জানতে চান, কারণ ত্বকের
সমস্যায় শুধু বাইরে কিছু লাগালেই সবসময় কাজ হয় না। শরীর ভেতর থেকে ঠিক না
থাকলে ছাতা বারবার ফিরে আসতে পারে। তাই খাবারের দিকে একটু নজর দেওয়া জরুরি।
প্রতিদিনের খাবারে যদি সহজ, হালকা আর পরিষ্কার খাবার রাখা যায়, তাহলে
শরীরের ভেতরের অবস্থা অনেকটাই ভালো থাকে।
টক দই অনেকের জন্য উপকারী, কারণ এটি শরীরের ভেতরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে
সাহায্য করে। শাকসবজি যেমন লাউ, পেঁপে, শসা বা পালং শাক নিয়মিত খেলে শরীর
ঠান্ডা থাকে এবং ঘাম কম হয়। রসুন আর পেঁয়াজ রান্নায় থাকলে সেটাও ভালো, কারণ
এগুলো শরীর পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। ফলের মধ্যে পেয়ারা, আপেল, কমলা বা
ডালিম ত্বকের জন্য উপকারী বলে অনেকেই মনে করেন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই জরুরি, কারণ পানি শরীরের ভেতরের ময়লা বের করতে
সাহায্য করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত মিষ্টি, চিনি দেওয়া পানীয়, ভাজাপোড়া আর
ফাস্ট ফুড শরীরের জন্য ঝামেলা বাড়াতে পারে। এগুলো বেশি খেলে ঘাম আর ত্বকের
সমস্যা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় অতিরিক্ত ঝাল খাবারেও শরীর গরম হয়ে
যায়, ফলে চুলকানি বাড়তে পারে। তাই খাবার যত সহজ আর ঘরোয়া রাখা যায়, ততই
ভালো। নিয়ম মেনে খাওয়া আর সময়মতো খাওয়ার অভ্যাস থাকলে শরীরের ছাতা কমাতে
খাবার অনেকটাই সাহায্য করতে পারে।
কোন ভুলগুলোর কারণে ছাতা বারবার হয়
কোন ভুলগুলোর কারণে ছাতা বারবার হয় তা অনেকেই বুঝতে পারেন না, আর সেখানেই
সমস্যা আটকে থাকে। অনেক সময় ছাতা কিছুটা কমলেই মানুষ ভাবেন সমস্যা শেষ,
তারপর আগের অভ্যাসে ফিরে যান। এটিই সবচেয়ে বড় ভুল। গোসলের পর শরীর ভালোভাবে
না শুকানো, বিশেষ করে বগল, কুঁচকি বা ত্বকের ভাঁজে ভেজাভাব রেখে দেওয়া হলে
ছত্রাক আবার সক্রিয় হয়।
আরেকটি সাধারণ ভুল হলো ভেজা বা ঘাম ধরা কাপড় দীর্ঘ সময় পরে থাকা। অনেকেই
বাইরে থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে কাপড় বদলান না, এতে সংক্রমণ সহজেই ফিরে আসে।
অন্যের তোয়ালে, গেঞ্জি বা বিছানার চাদর ব্যবহার করাও বড় কারণ হতে পারে।
অনেক সময় নিজের ব্যবহৃত কাপড় ঠিকমতো রোদে না শুকিয়ে আবার পরা হয়, এতে
ছত্রাক বেঁচে থাকে।
আরও একটি বড় ভুল হলো নিজের ইচ্ছেমতো ক্রিম বা মলম ব্যবহার করা। কিছু ক্রিম
সাময়িক আরাম দিলেও ভিতরে ভিতরে সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। আঁটসাঁট সিনথেটিক পোশাক
নিয়মিত পরলে ত্বক বাতাস পায় না, ঘাম জমে থাকে, ফলে ছাতা বারবার হয়। খাবারের
দিকেও ভুল থাকে, যেমন অতিরিক্ত মিষ্টি বা ভাজাপোড়া খাওয়া, যা শরীরের ভেতরের
ভারসাম্য নষ্ট করে। অনেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঠিক রাখেন না, আবার কেউ
কেউ অল্প ভালো হলেই সব সতর্কতা ছেড়ে দেন। আসলে এই ছোট ছোট ভুলগুলো ঠিক না
করলে শরীরের ছাতা পুরোপুরি না সেরে বারবার ফিরে আসে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি এই বিষয়টি জানা খুব দরকার, কারণ অনেক
সময় মানুষ দেরি করে ফেলেন। শুরুতে শরীরের ছাতা হালকা থাকলে ঘরোয়া যত্নে
কিছুটা আরাম মিলতে পারে, কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট হয় না। যদি ছাতা
কয়েক সপ্তাহ ধরে না কমে, বরং ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে, তখন আর অপেক্ষা করা
ঠিক নয়।
চুলকানি যদি এতটাই বেড়ে যায় যে ঘুম বা দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হয়, সেটিও
সতর্ক হওয়ার লক্ষণ। অনেক সময় ত্বকে জ্বালা, ফাটা বা পানি পড়ার মতো
সমস্যা দেখা দেয়, যা সাধারণ ছাতার চেয়ে বেশি জটিল হতে পারে। শিশু, বয়স্ক
মানুষ বা যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে
পারে, তাই শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া নিরাপদ।
মাথার ত্বক, মুখ বা গোপন স্থানে ছাতা হলে নিজের মতো করে কিছু ব্যবহার না
করাই ভালো। ভুল ক্রিম লাগালে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে এবং পরে ঠিক হতে
অনেক সময় লাগে। একই সঙ্গে যদি জ্বর, শরীর ব্যথা বা অন্য কোনও অস্বস্তি
দেখা দেয়, তাহলে বিষয়টি আর সাধারণ ধরে নেওয়া উচিত নয়। অনেকেই লজ্জা বা
ব্যস্ততার কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না, কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান
হয় না। সঠিক সময়ে পরামর্শ নিলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায় এবং সংক্রমণ
ছড়ানোর ঝুঁকিও কমে। তাই লক্ষণ বুঝে দেরি না করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে
বুদ্ধিমানের কাজ।
শরীরের ছাতা প্রতিরোধে দৈনন্দিন সতর্কতা
শরীরের ছাতা প্রতিরোধে দৈনন্দিন সতর্কতা মেনে চললে এই সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি
অনেকটাই কমে যায়। ছাতা এমন একটি সমস্যা যা একবার হলে বারবার ফিরে আসতে চায়,
তাই আগে থেকেই সাবধান থাকা বেশি কাজে দেয়। প্রতিদিন নিয়ম করে গোসল করা খুব
দরকার, বিশেষ করে গরমের সময় বা বেশি ঘাম হলে।
গোসলের পর শরীর ভালোভাবে মুছে শুকনো রাখা জরুরি, কারণ ভেজা ত্বকেই ছত্রাক
সবচেয়ে সহজে বাড়ে। বগল, কুঁচকি, পায়ের ফাঁক বা ত্বকের ভাঁজগুলো আলাদা করে
পরিষ্কার ও শুকনো রাখা উচিত। পোশাকের ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে। ঢিলেঢালা
সুতি কাপড় শরীরকে আরাম দেয় এবং ঘাম জমতে দেয় না। ঘাম ধরা কাপড় বা ভেজা
পোশাক পরে বসে না থেকে দ্রুত পরিবর্তন করা ভালো।
তোয়ালে, গেঞ্জি বা অন্তর্বাস অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করা থেকে বিরত থাকা
উচিত। নিজের কাপড় ও তোয়ালে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে ব্যবহার করলে সংক্রমণের
ঝুঁকি কমে। প্রতিদিন একই জুতা বা মোজা না পরে মাঝে বিরতি দেওয়া ভালো, এতে
পা শুকনো থাকে। ঘরের ভেতর বা বাইরে কাজের সময় শরীর বেশি ঘামলে মাঝেমধ্যে
পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নেওয়া যেতে পারে।
খাবারের দিকেও নজর রাখা দরকার, কারণ অতিরিক্ত মিষ্টি বা অস্বাস্থ্যকর খাবার
শরীরের সমস্যা বাড়াতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর ভেতর থেকে ভালো
থাকে। ছোটখাটো চুলকানি বা দাগ দেখা দিলেই অবহেলা না করে পরিষ্কার রাখা ও
সতর্ক হওয়া দরকার। নিয়মিত এই অভ্যাসগুলো বজায় রাখলে শরীরের ছাতা থেকে
নিজেকে অনেকটাই নিরাপদ রাখা সম্ভব।
শেষ কথা:শরীরের ছাতা দূর করার উপায়
শেষ কথা হিসেবে বলতে পারি, শরীরের ছাতা দূর করার উপায় মূলত সচেতনতা আর
নিয়মিত যত্নের সঙ্গে যুক্ত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ঘরোয়া যত্ন ও সঠিক
অভ্যাস মেনে চললে এই সমস্যা অনেক সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিয়মিত গোসল
করা, ত্বক শুকনো রাখা, পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা আর ঘামাচি হলে কাপড়
বদলানো হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
খাবারের দিকে নজর দিলে শরীর ভেতর থেকে সুস্থ থাকে, যা ছাতার পুনরাবৃত্তি
কমাতে সাহায্য করে। যদিও কখনও কখনও ঘরোয়া পদ্ধতিতে সমস্যা পুরোপুরি দূর
হয় না, তখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। আমি মনে করি, যারা
সচেতনভাবে এই ছোট ছোট বিষয়গুলো মেনে চলে, তারা দীর্ঘমেয়াদে ছাতা থেকে
মুক্ত থাকে।
সংক্রমণ দ্রুত কমাতে এবং পুনরায় না আসার জন্য, ব্যক্তিগত জিনিস ভাগাভাগি না
করা, ভেজা কাপড় পর না থাকা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। আমার
অভিজ্ঞতায়, এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে ছাতা হয়তো আবার ফিরে আসবে না, আর ত্বক
সুস্থ ও পরিষ্কার থাকবে। সুতরাং শরীরের ছাতা দূর করা এবং প্রতিরোধ করা
পুরোপুরি সম্ভব, যদি নিয়মিত সতর্কতা ও সঠিক যত্ন মেনে চলা হয়।



লাইফ ব্লেন্ড আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url