ত্বকের শুষ্কতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

ত্বকের শুষ্কতা আজকের ব্যস্ত জীবনের অন্যতম সাধারণ সমস্যা। শুষ্ক ত্বক শুধু চামড়াকে খসখসে করে তোলে না, বরং ত্বকের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেয় এবং অস্বস্তিকর চুলকানি বা ফ্লেকিং-এর কারণ হতে পারে। তবে এটি শুধুমাত্র দামের দাগ বা কেমিক্যাল প্রোডাক্ট দিয়ে সমাধান করার নয়। ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়মিত যত্ন নিলে ত্বককে স্বাস্থ্যবান, নরম ও উজ্জ্বল রাখা সম্ভব। এই ব্লগে আমরা এমন ঘরোয়া ফেস প্যাক, তেল, মাস্ক এবং জীবনধারার পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করব, যা সহজ, নিরাপদ এবং প্রাকৃতিকভাবে শুষ্ক ত্বক দূর করতে কার্যকর।
ত্বকের-শুষ্কতা-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়
পোস্টটি শুরু করার আগে আপনাদের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি যে, অবশ্যই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সম্পর্কে জানবেন এবং তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করবেন। পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে আপনারা এ পোস্টের গুরুত্বপূর্ণ সব কথাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং তা প্রয়োগ করতে কোন অসুবিধা হবে না বা প্রয়োগের পরও কোন অসুবিধা হবে না। আপনাদের সুবিধার্থে পোষ্টের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো পেজ সূচিপত্র আকারে তুলে ধরা হলো।

পেজ সূচিপত্র:ত্বকের শুষ্কতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

ত্বকের শুষ্কতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

ত্বকের শুষ্কতা অনেকেরই দৈনন্দিন সমস্যা। সকালবেলা মুখ ধোয়ার পর ত্বক টানটান লাগে, চামড়ায় ফ্লেক দেখা যায় এবং কখনও কখনও চুলকানিও হয়। এই ধরনের সমস্যা দূর করতে বাজারের দামী ক্রিমের ওপর নির্ভর করার দরকার নেই। ঘরে বসে প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বককে নরম ও আর্দ্র রাখা সম্ভব। হানি, অ্যালোভেরা, নারকেল তেল, দই–এসব সাধারণ উপাদান দিয়ে ফেস প্যাক তৈরি করা যায় যা ত্বককে হাইড্রেট রাখে।
নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং শুষ্ক ভাব দূর হয়। শুধু ফেস প্যাক নয়, দৈনন্দিন পানি বেশি খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং ত্বককে সূর্যের অতিরিক্ত রশ্মি থেকে রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। ঠান্ডা বা শুকনো আবহাওয়ায় ত্বককে আর্দ্র রাখতে নরম তোয়ালে ব্যবহার করা এবং হালকা ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করা উচিত।

ঘরোয়া ত্বকের যত্ন সহজ, সস্তা এবং প্রাকৃতিক হওয়ায় এটি সকলের জন্য নিরাপদ। ছোট ছোট অভ্যাস বদলেই ত্বকের শুষ্কতা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। নিয়মিত যত্ন এবং প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করে স্বাস্থ্যবান, নরম এবং উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া সত্যিই সম্ভব।

ত্বক শুষ্ক হওয়ার সাধারণ কারণগুলো

ত্বক শুষ্ক হওয়ার সমস্যা অনেকের জন্য সাধারণ হলেও এর পিছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করছে। প্রথমত, পানি কম খাওয়া এবং হাইড্রেশন ঠিকমতো না থাকা ত্বককে শুষ্ক করে দেয়। দিনের বেলা পর্যাপ্ত পানি না খেলে ত্বক নিজেকে আর্দ্র রাখতে পারে না। এছাড়াও, পরিবেশের অবস্থা-যেমন শুকনো বা ঠান্ডা আবহাওয়া-ত্বককে কড়া করে তোলে এবং আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়।

অনেক সময় আমরা ভুল সাবান বা কেমিক্যাল সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ ব্যবহার করি, যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দূর করে এবং শুষ্ক ভাব আরও বাড়িয়ে দেয়। ত্বক শুষ্ক হওয়ার আরও একটি বড় কারণ হলো খুব গরম পানিতে মুখ ধোয়া। গরম পানি ত্বকের লিপিড হারায় এবং চামড়া খসখসে হয়। এছাড়া হরমোনের পরিবর্তন বা বয়স বাড়ার কারণে ত্বক নিজের আর্দ্রতা ধরে রাখতে কম সক্ষম হয়।

অতিরিক্ত সূর্যের তাপও ত্বককে শুষ্ক করে এবং লাইন পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ হতে পারে। সবমিলিয়ে, শুষ্ক ত্বকের মূল কারণগুলো হলো কম হাইড্রেশন, পরিবেশগত প্রভাব, ভুল যত্নের পণ্য ব্যবহার, অতিরিক্ত গরম পানি, হরমোনের পরিবর্তন এবং সূর্যের অতিরিক্ত রশ্মি। এই কারণগুলো বুঝে নিয়মিত ঘরোয়া যত্ন নিলে ত্বককে নরম ও সুস্থ রাখা সম্ভব।

শুষ্ক ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন যত্ন

শুষ্ক ত্বক অনেকের জন্য সমস্যা হলেও সঠিক দৈনন্দিন যত্ন মেনে চললে তা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সকালে এবং রাতে মুখ ধোয়ার সময় হালকা এবং নরম ফেসওয়াশ ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গরম পানিতে মুখ ধোয়া বা শক্ত সাবান ব্যবহার করলে ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা চলে যায়। ধোয়ার পর একটি হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক নরম থাকে এবং খসখসে ভাব কমে।
দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি খাওয়া, হাইড্রেটেড থাকার জন্য জরুরি। ত্বককে সূর্যের অতিরিক্ত রশ্মি থেকে রক্ষা করতে SPFযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা দরকার। সপ্তাহে ১-২ বার হালকা স্ক্রাব বা ঘরোয়া ফেস প্যাক ব্যবহার করলে মৃত চামড়া সরিয়ে ত্বক মসৃণ থাকে। ঘরোয়া উপাদান যেমন হানি, দই বা অ্যালোভেরা ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্র রাখে।

শুষ্ক ত্বক বেশি ঠান্ডা বা শীতল আবহাওয়ায় আরও সংবেদনশীল হয়, তাই ঘরের ভিতরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে আর্দ্রতা বজায় থাকে। ঘুম যথেষ্ট না হলে ত্বক খসখসে দেখায়, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াও জরুরি। নিয়মিত এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো মেনে চললে শুষ্ক ত্বক নরম, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যবান থাকে।

ঘরোয়া ন্যাচারাল ফেস প্যাক ও মাস্কের ব্যবহার

শুষ্ক বা নরম ত্বককে সতেজ এবং উজ্জ্বল রাখার জন্য ঘরোয়া ন্যাচারাল ফেস প্যাক খুব কার্যকর। বাজারের বিভিন্ন কেমিক্যাল ফেস প্যাকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে ত্বককে আর্দ্র রাখার পাশাপাশি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। হানি, দই, অ্যালোভেরা, নারকেল তেল, oatmeal-এই সব ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে সহজেই ফেস মাস্ক তৈরি করা যায়।
ত্বকের-শুষ্কতা-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়
সপ্তাহে ১-২ বার এই ধরনের ফেস প্যাক ব্যবহার করলে মৃত চামড়া সরিয়ে ত্বক মসৃণ হয়, ত্বকের শুষ্ক ভাব কমে এবং ত্বক নরম থাকে। হালকা হাতে মুখে মাস্ক মেখে ১৫-২০ মিনিট রাখলে উপাদানগুলো ত্বকে প্রবেশ করে কার্যকর হয়। শুধু মুখ নয়, ঘরোয়া ফেস মাস্ক ঘাড় এবং হাতেও ব্যবহার করা যায়। ফেস প্যাক ব্যবহারের সময় ত্বককে হালকা আর্দ্র রাখা দরকার।

ধোয়ার সময় গরম পানির বদলে লুপ্ত পানি ব্যবহার করলে ত্বক আর্দ্র থাকে। অনেকেই মনে করে বেশি সময় ধরে মাস্ক রাখলেই বেশি সুবিধা হবে, কিন্তু ২০-২৫ মিনিটই যথেষ্ট। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই ধরনের ন্যাচারাল ফেস মাস্ক ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে, শুষ্ক ভাব কমে এবং ত্বককে স্বাস্থ্যবান রাখা যায়।

এছাড়া নিয়মিত ঘরে তৈরি ফেস মাস্ক ব্যবহার করলে কেমিক্যাল পণ্যের উপর নির্ভর কমে এবং ত্বককে দীর্ঘমেয়াদে নরম ও উজ্জ্বল রাখা সম্ভব। ঘরোয়া ফেস প্যাক এবং মাস্ক ব্যবহার করা সহজ, সাশ্রয়ী এবং প্রাকৃতিকভাবে কার্যকর। নিয়মিত ব্যবহার করলে শুষ্ক ত্বক দূর হয়, ত্বক স্বাস্থ্যবান থাকে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।

ত্বককে আর্দ্র রাখার সহজ ও কার্যকরী তেল ও সিরাম

ত্বক আর্দ্র রাখা সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান ত্বকের জন্য খুবই দরকার। অনেক সময় ঠিকমতো যত্ন না নিলে ত্বক রুক্ষ, খসখসে এবং নিষ্প্রাণ দেখায়। এই সমস্যা কমাতে তেল ও সিরাম খুব ভালোভাবে কাজ করে, বিশেষ করে যখন সেগুলো নিয়মিত এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক তেল যেমন নারকেল তেল, বাদাম তেল বা অলিভ অয়েল ত্বকের ভেতরে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
রাতে ঘুমানোর আগে হালকা করে তেল ম্যাসাজ করলে ত্বক নরম থাকে এবং সকালেও ফ্রেশ অনুভব হয়। আবার যারা ভারী তেল পছন্দ করেন না, তাদের জন্য হালকা সিরাম ভালো বিকল্প। সিরাম ত্বকের ভেতরে দ্রুত ঢুকে যায় এবং চিটচিটে ভাব তৈরি করে না। গোসল বা মুখ ধোয়ার পর যখন ত্বক সামান্য ভেজা থাকে, তখন তেল বা সিরাম ব্যবহার করলে আর্দ্রতা ভালোভাবে লক হয়।

অনেকেই বেশি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে মনে করেন, কিন্তু অল্প পরিমাণই যথেষ্ট। দিনে একবার বা দুইবার ব্যবহার করলেই ভালো ফল পাওয়া যায়। শুষ্ক আবহাওয়া বা এসি রুমে বেশি থাকলে ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হারায়, তখন তেল বা সিরাম আরও জরুরি হয়ে পড়ে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক মসৃণ থাকে, ফাটা ভাব কমে এবং ত্বক দেখতেও স্বাস্থ্যবান লাগে। সঠিক তেল বা সিরাম বেছে নিয়ে অভ্যাসের মধ্যে আনলে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়।

ডায়েট ও পানীয়: ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ানোর খাবার

ত্বকের আর্দ্রতা শুধু বাহ্যিক যত্নের উপর নির্ভর করে না, এর বড় একটি অংশ আসে প্রতিদিনের খাবার আর পানীয় থেকে। যারা নিয়মিত ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করেন না, তাদের ত্বক সহজেই শুষ্ক হয়ে যায়। পানি এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে পানির ঘাটতি হলে ত্বক নিজে থেকেই রুক্ষ দেখায়, তাই দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করা ত্বক আর্দ্র রাখার প্রথম ধাপ।

শুধু পানি নয়, ডাবের পানি, লেবু মেশানো হালকা পানীয় বা ফলের জুসও শরীর ও ত্বক দুটোকেই হাইড্রেট রাখে। খাবারের দিক থেকে দেখতে গেলে শাকসবজি এবং ফল ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। শসা, তরমুজ, কমলা, পেঁপে বা আপেলের মতো ফলের মধ্যে প্রাকৃতিক পানি থাকে, যা ত্বকের ভেতর থেকে আর্দ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে।

বাদাম, চিনাবাদাম বা তিলের মতো খাবারে ভালো ফ্যাট থাকে, যা ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচায়। মাছ, ডিম এবং দুধজাত খাবার ত্বককে নরম রাখতে সহায়তা করে। আবার অতিরিক্ত চা, কফি বা ফাস্ট ফুড শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, ফলে ত্বক আরও শুষ্ক লাগে। নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর পানীয় অভ্যাস করলে ত্বক স্বাভাবিকভাবেই আর্দ্র থাকে। বাহির থেকে যতই যত্ন নেওয়া হোক, ভেতর থেকে সাপোর্ট না পেলে ত্বকের সেই উজ্জ্বলতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। সঠিক ডায়েট মেনে চললে ত্বক নরম, ফ্রেশ এবং প্রাণবন্ত দেখায়।

আর্দ্রতা রক্ষায় জীবনধারা ও অভ্যাস পরিবর্তন

ত্বক আর্দ্র রাখার জন্য শুধু ক্রিম বা তেল ব্যবহার করলেই যথেষ্ট নয়, দৈনন্দিন জীবনধারা ও অভ্যাসের বড় ভূমিকা থাকে। অনেক সময় আমরা নিজের অজান্তেই এমন কিছু অভ্যাস করি, যা ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট করে দেয়। যেমন, দেরি করে ঘুমানো বা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ত্বক ক্লান্ত ও শুষ্ক দেখায়। প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুমানো এবং অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা বিশ্রাম নিলে ত্বক নিজে থেকেই ভালো থাকে। 
একইভাবে, সারাদিন এসি রুমে থাকা ত্বক থেকে আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। এ ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে খোলা বাতাসে থাকা বা ঘরে হালকা আর্দ্র পরিবেশ রাখা উপকারী। গোসল বা মুখ ধোয়ার অভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ। খুব গরম পানিতে বারবার মুখ ধুলে ত্বক দ্রুত রুক্ষ হয়ে যায়। হালকা কুসুম গরম বা স্বাভাবিক পানি ব্যবহার করলে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা থাকে।

এছাড়া, দিনের মধ্যে বারবার মুখে সাবান ব্যবহার করাও ঠিক নয়। কাজের ফাঁকে পর্যাপ্ত পানি পান করা, শরীর নড়াচড়া করা এবং দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে না থাকাও ত্বকের জন্য ভালো। ধূমপান বা অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুডের অভ্যাস ত্বকের ক্ষতি করে, ফলে আর্দ্রতা কমে যায়। ছোট ছোট অভ্যাস বদলালে ত্বকে বড় পরিবর্তন দেখা যায়। নিয়মিত হাঁটা, হালকা ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ কম রাখলে ত্বক বেশি ফ্রেশ থাকে। জীবনধারা সহজ ও স্বাস্থ্যকর হলে ত্বক নিজে থেকেই নরম, সতেজ এবং আর্দ্র থাকে।

ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধে ঋতু অনুযায়ী যত্ন

ত্বকের শুষ্কতা সব সময় একভাবে থাকে না, ঋতু বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে এর ধরনও বদলে যায়। তাই সারা বছর একই যত্ন নিলে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। শীতকালে বাতাস শুষ্ক থাকে এবং ঠান্ডার কারণে ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হারায়। এই সময় হালকা ফেসওয়াশ ব্যবহার করা, মুখ ধোয়ার পর দ্রুত ময়েশ্চারাইজার লাগানো এবং রাতে তেল বা ক্রিম ব্যবহার করা খুব কাজে আসে।

গরম পানিতে গোসল কম করলে ত্বক বেশি আরাম পায়। গরমের সময় আবার ঘাম ও ধুলাবালির কারণে ত্বক ক্লান্ত লাগে। তখন ভারী ক্রিমের বদলে হালকা জেল বা লোশন ব্যবহার করা ভালো। সূর্যের তাপ থেকে ত্বক বাঁচাতে ছাতা, টুপি বা সান প্রোটেকশন ব্যবহার করা দরকার। বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা থাকলেও ত্বকের সমস্যা কমে না। ঘাম জমে থাকলে ত্বক শুষ্ক ও অস্বস্তিকর লাগতে পারে।

এই সময় নিয়মিত মুখ পরিষ্কার রাখা এবং হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি। শরৎকালে আবহাওয়া তুলনামূলক আরামদায়ক হলেও ত্বকের যত্নে অবহেলা করা ঠিক নয়। নিয়মিত পানি পান এবং ঘরোয়া ফেস প্যাক ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। ঋতু অনুযায়ী যত্ন নিলে ত্বক নিজে থেকেই মানিয়ে নিতে পারে। আবহাওয়ার সঙ্গে অভ্যাস বদলালে শুষ্কতা কমে এবং ত্বক নরম ও স্বাস্থ্যবান থাকে।

ঘরোয়া সমাধানে সাধারণ ভুল ও সতর্কতা

ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া সহজ এবং অনেকের কাছেই ভরসার, তবে কিছু সাধারণ ভুলের কারণে ভালো ফলের বদলে উল্টো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকেই মনে করেন প্রাকৃতিক মানেই সব সময় নিরাপদ, কিন্তু বাস্তবে বিষয়টা এমন নয়। প্রথম বড় ভুল হলো উপাদান না বুঝে ব্যবহার করা। লেবু, বেকিং সোডা বা অতিরিক্ত কাঁচা হলুদের মতো কিছু জিনিস ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বকে।
ত্বকের-শুষ্কতা-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়
আরেকটি ভুল হলো একই ফেস প্যাক বা মাস্ক খুব ঘন ঘন ব্যবহার করা। এতে ত্বক আরও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কারও কাছ থেকে শুনে ঘরোয়া রেসিপি ব্যবহার করছেন, কিন্তু নিজের ত্বকের ধরন বিবেচনা করছেন না। সব ত্বকের জন্য এক উপায় কাজ করে না। আবার কেউ কেউ ফেস প্যাক অনেকক্ষণ মুখে রেখে দেন, ভাবেন এতে বেশি কাজ হবে।
আসলে এতে ত্বক শুষ্ক হয়ে টান ধরতে পারে। পরিষ্কার না করে বা মেকআপের উপর ফেস প্যাক লাগানোও একটি বড় ভুল। এতে ত্বকের পোর বন্ধ হয়ে যায়। সতর্কতার দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নতুন কিছু ব্যবহার করার আগে ছোট করে পরীক্ষা করা। মুখে লাগানোর আগে হাতে বা কানের পাশে অল্প করে ব্যবহার করলে সমস্যা বোঝা যায়। খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার, শক্ত করে স্ক্রাব করা বা বারবার সাবান লাগানো থেকেও বিরত থাকা উচিত।

ঘরোয়া যত্নের পাশাপাশি ত্বককে বিশ্রাম দেওয়াও জরুরি। সঠিকভাবে এবং বুঝে ঘরোয়া সমাধান ব্যবহার করলে ত্বক ভালো থাকে। কিন্তু তাড়াহুড়ো বা ভুল ধারণা থেকে করা যত্ন অনেক সময় ত্বকের ক্ষতি ডেকে আনে। তাই সচেতন থাকাই সবচেয়ে ভালো পথ।

শেষ কথা:ত্বকের শুষ্কতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

আমার কাছে ত্বকের শুষ্কতা দূর করার ঘরোয়া উপায় মানে শুধু কিছু ফেস প্যাক বা তেল ব্যবহার করা নয়, বরং নিজের ত্বককে বোঝা এবং সময় দেওয়া। অনেকেই দ্রুত ফলের আশায় দামী প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন, কিন্তু নিয়মিত ঘরোয়া যত্নই দীর্ঘমেয়াদে বেশি কাজ করে। ঘরে থাকা সাধারণ উপাদান দিয়ে যত্ন নিলে ত্বক ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয় এবং ক্ষতির ঝুঁকিও কম থাকে।

আমি মনে করি, শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে ধৈর্য সবচেয়ে জরুরি। একদিন বা দুই দিনে পরিবর্তন আশা করলে হতাশ হতে হয়। নিয়মিত পানি পান, সহজ খাবার খাওয়া, ঘুম ঠিক রাখা এবং ত্বকের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া এই বিষয়গুলো অনেক সময় আমরা গুরুত্ব দিই না। অথচ এগুলোই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি।

ঘরোয়া যত্নের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এতে ত্বক নিজের মতো করে সুস্থ হতে পারে। তবে নিজের ত্বকের ধরন বুঝে যত্ন নেওয়াটা জরুরি বলে আমি মনে করি। অন্যের জন্য যা ভালো কাজ করে, সেটা নিজের জন্য নাও হতে পারে। ত্বকের যত্নকে যদি অভ্যাসের মধ্যে আনা যায়, তাহলে শুষ্কতার সমস্যা ধীরে ধীরে কমে। সহজ, প্রাকৃতিক এবং নিয়মিত যত্নই এখানে সবচেয়ে বাস্তব সমাধান।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

লাইফ ব্লেন্ড আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url