ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি
আপনার কি ব্যাংক একাউন্ট আছে? আপনি কি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন। আপনি ব্যাংকের
লোন নেওয়ার পর ভাবছেন ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবেন না, তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত একদমই
ভুল। কারণ আজকে আমরা জানতে চলেছি ব্যাংকের লোন পরিশোধ না করলে, ব্যাংক আপনার ওপর
কি কি পদক্ষেপ নিতে পারে এবং আরো জানবো আপনার কি কি শাস্তি হতে পারে।
আজকের এ পোষ্টের মাধ্যমে আমরা বিস্তারিত জানতে চলেছি যে ব্যাংকের লোন পরিশোধ
না করার শাস্তি। তো চলুন আজকের বিষয়টি শুরু করা যাক। তাই সবাইকে আবেদন করব শেষ
পর্যন্ত থাকবেন।
পেজ সূচিপত্র:ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত
- ব্যাংক কী ও এর প্রধান কাজ
- ব্যাংকের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ও প্রয়োজনীয়তা
- ব্যাংক ঋণ কী এবং কেন নেওয়া হয়
- ঋণ চুক্তি ও পরিশোধের শর্তাবলি
- ঋণ পরিশোধ না করার সাধারণ কারণসমূহ
- ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি ও পরিণতি
- আইনগত ব্যবস্থা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত প্রক্রিয়া
- ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের দায়িত্ব ও সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা
- ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা ও সামাজিক প্রভাব
- শেষ কথা:ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি
ব্যাংক কী ও এর প্রধান কাজ
ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি-সম্পর্কে জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে
ব্যাংকিং ও এর প্রধান কাজ। তো চলেন শুরু করা যাক। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা
মানুষের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে এবং গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ প্রদান
করে থাকে। অনেক ব্যাংক আছে যারা ছোট ব্যাংক গুলোকে ও ঋণ প্রদান করে থাকে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে ব্যাংক হলো অর্থের লেনদেন ও ব্যবস্থাপনার একটি কেন্দ্র,
যেখানে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি সরকারও তাদের অর্থ জমা রাখে, বা প্রয়োজনে ঋণ
দেয়।
এখন আমরা জানতে চলেছি, ব্যাংকের প্রধান কাজ।ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত
গ্রহণ করে যার মাধ্যমে ব্যাংক গ্রাহকদের সঞ্চয় ও চলতি হিসাবের মাধ্যমে অর্থ
জমা রাখার সুযোগ করে দেয়। ঋণ প্রদান করে থাকে, ব্যাংক বিভিন্ন বিষয়ের উপর ঋণ
প্রদান করে থাকে যা গ্রাহকদের প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে। ব্যাংক যেগুলো
বিষয়ের উপর ঋণ প্রদান করে থাকে সেগুলো হলো: ব্যবসা, শিল্প, কৃষি, শিক্ষা
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে গ্রাহকদের নিয়মিত ঋণ প্রদান করে আসছে। গ্রাহকদের সুবিধার
জন্য ব্যাংক চেক, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদির
মাধ্যমে সহজ লেনদেনের ব্যবস্থা করে রেখেছে যাতে করে গ্রাহকদের কোন অসুবিধা
না হয়।
আরো পড়ুন:সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয় কোন ব্যাংক
ব্যাংক ঋণ বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখছে।
ব্যাংক বিভিন্ন ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শুরু করার জন্য কিছু সংখ্যক ঋণ
প্রদান করে থাকে যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল থাকছে।
বিভিন্ন ধরনের আমদানি ও রপ্তানি করার জন্য প্রতিটি ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা আদান
প্রদান করে থাকে। যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আমদানি ও রপ্তানি প্রতিনিয়ত সঠিকভাবে
প্রচলিত হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছে। গ্রাহকের জমা করা অর্থ
ব্যাংকের কাছে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখে।
আপনি ব্যাংকের কাছে অর্থ প্রদান করলে ব্যাংকটা সুরক্ষিত রাখে, যার মাধ্যমে
আপনার অর্থের কোন ক্ষতি হয় না। ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিয়ে জাতীয়
অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দেশের অর্থনীতির
প্রতিটা খাতে অবদান রাখছে।
ব্যাংকের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ও প্রয়োজনীয়তা
ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি-সম্পর্কে জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে
ব্যাংকের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ও প্রয়োজনীয়তা।ব্যাংকের সাথে মানুষের দৈনন্দিন
জীবন গভীরভাবে জড়িত। আমরা প্রতিদিন সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের সেবা
ব্যবহার করছি। সেটা হতে পারে বেতন গ্রহণ, ব্যবসার লেনদেন, সঞ্চয় জমা, বিল
পরিষদ এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং এইসবের মাধ্যমে আমরা ব্যাংকের সাথে জড়িত থাকছি।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক অনেক কার্যক্রমের সঙ্গে ব্যাংক সরাসরি সম্পর্ক
স্থাপন করে। তাই বলা যায় একজন মানুষ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী
হওয়ার জন্য সবাই ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল।
এখন আমরা জানবো ব্যাংক থাকার প্রয়োজনীয়তা। যদি ব্যাংক না থাকতো তাহলে আমাদের
অর্থনীতি কখনো সচল অবস্থায় থাকতো না, তাই ব্যাংক থাকা খুবই প্রয়োজনীয়। আবার
আপনার অর্থ সুরক্ষা, লেনদেনের সুবিধা, ঋণের সুবিধা, সঞ্চয়ের সুযোগ, অর্থনৈতিক
উন্নয়ন এমনকি সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
আপনার অর্থ সুরক্ষা রাখা দরকার আপনি ব্যাংকে গিয়ে অর্থ জমা রেখে আসতে পারেন,
ব্যাংক আপনার অর্থ নিরাপদে রাখবে। আপনার লেনদেনের জন্য ব্যাংকে টাকা হস্তান্তর,
বিল পরিশোধ বা কেনাকাটা করা যায়।
আর এখন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই লেনদেন করতে পারছি। আপনি যে
কোন ঋণের জন্য ব্যাংকের কাছে ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু ঋণ নেওয়ার জন্য
কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যেমন: ব্যবসা, শিক্ষা বা জরুরী প্রয়োজনে ঋণ প্রদান করে
থাকে। বিভিন্ন সঞ্চয় হিসাব ও ডিপোজিট মাধ্যমে ভবিষ্যতের টাকা জমা রাখার জন্য
ব্যাংক খুব উপকারী হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাংক অর্থ
প্রদান করে থাকে, যেমন: বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্পের বিনিয়োগ করে
ব্যাংক জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখে।
সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ব্যাংক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বজায় রাখে। ব্যাংকিং
ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। আপনি ব্যাংকের
মাধ্যমে আপনার জীবনের দৈনন্দিন কাজ করে থাকেন। এজন্যই ব্যাংকের সাথে আমাদের
সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত এবং ব্যাংক আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় একটি
অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংক ঋণ কী এবং কেন নেওয়া হয়
ব্যাংক ঋণ হল ব্যাংকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ
লোন নেওয়া একটি আর্থিক সুবিধা, যার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুটসহ ফেরত দিতে
হয় তাকে ব্যাংক ঋণ বলে। যদি সংক্ষেপে বলা যায় তাহলে-ব্যাংক সাধারণত বিভিন্ন
ধরনের, যেমন: ব্যক্তিগত ঋণ, ব্যবসায়ী ঋণ, কৃষি কাজে ঋণ, হোম লোন বা
শিক্ষা ঋণ দিয়ে থাকে। এই গ্রহণের সময় ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে একটি
লিখিত চুক্তি হয়, যেখানে কত টাকা দিতে হবে এবং কত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে
হবে ও সুদের হার কত হবে এইসব জিনিস সেই চুক্তির ভিতরে লেখা থাকে।
ব্যাংকের কাছ থেকে কেন ঋণ নেওয়া হয়। ব্যাংকের কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন কারণে
লোন নিয়ে থাকি এবং এগুলো আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ নিয়ে থাকি।
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আমরা ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকি, যেমন: হঠাৎ
চিকিৎসার খরচ, বাড়ি তৈরি শিক্ষা বা ভ্রমণের মতো জরুরী ব্যক্তিগত প্রয়োজনে
আমরা ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করি। ব্যবসা শুরু বা মূলধন যোগান দিতে আমরা
ব্যাংকের কাছ থেকে লোন গ্রহণ করে থাকি। আমরা অনেকে ব্যবসা শুরু করার জন্য
ব্যাংকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যাংকের কাছ
থেকে লোন গ্রহণ করে থাকে।
আরো পড়ুন:কোন কোন ব্যাংক প্রবাসীর লোন দেয়
যা আমাদের ব্যবসার মূলধন যোগান দিতে এবং নতুন প্রজেক্ট চালু করতে সাহায্য করে
থাকে। কৃষি কাজের জন্যও আমরা ব্যাংকের কাছ থেকে লোন নিই। কৃষি কাজের বিভিন্ন
উপকরণ বা যন্ত্রপাতির জন্য কৃষকরা গ্রামীণ ব্যাংক বা কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ
করে থাকে। যা তাদের কৃষিকাজে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে থাকে। কৃষকের জমির ফসল
কাটার পর তা বাজারে বিক্রি করা হলে যে আয় আসে সেই টাকা থেকে ব্যাংকের ঋণ
পরিশোধ করে থাকে। আবার আমরা অনেকে বাড়ি তৈরি বা জমি কেনার জন্য ব্যাংক কর্তৃক
লোন গ্রহণ করে থাকি।
বাড়ি তৈরি করার জন্য আমরা ব্যাংকের কাছে লোন গ্রহণ করে থাকি যাকে বলা হয়
হাউজিং লোন। হাউজিং লোন নেওয়ার জন্য জমির দলিল ব্যাংকের কাছে আমানত হিসেবে
রাখা হয়, যার মাধ্যমে ব্যাংক আমাদেরকে লোন প্রদান করে থাকে। আরেকটি হচ্ছে
মর্টগেজ লোন যার মাধ্যমে লোন গ্রহণকারী জমি কেনার জন্য ঋণ নিয়ে থাকে।
পরবর্তীতে জমি কেনা হয়ে গেলে ব্যাংকে লিংক পরিশোধ করে থাকে। অর্থনৈতিক সংকট
সামাল দিতে আমরা ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকি। যখন আমাদের হাতে
পর্যাপ্ত অর্থ থাকে না, তখন সাময়িক সমাধানের জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ
করে থাকি।
এর মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনীতিকের চাকা সচল থাকে। বিভিন্ন বিনিয়োগের জন্য,
যেমন: শেয়ার বাজার, শিল্প বা অন্যান্য খাতে অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য আমরা
ব্যাংকের কাছ থেকে লোন নিয়ে থাকি। সংক্ষেপে বলা যায়, ব্যাংকের ঋণ মানুষের
আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠার উপায় হিসেবে সাহায্য করে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড়
একটি ভূমিকা রাখে।
ঋণ চুক্তি ও পরিশোধের শর্তাবলি
ঋণ চুক্তি হলো গ্রাহক ব্যাংকের মধ্যে করা সেই লিখিত চুক্তিকে বুঝায়। এতে
কত টাকা লোন নেওয়া হয়েছে, কতদিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে, কত সুদ দিতে
হবে এবং জামানত বা গ্যারান্টি শর্তাবলী স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে। এটি
মূলত ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে আইনি বাধ্য বাধ্যকতা তৈরি করা হয়। যদি
গ্রাহক সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করে তাহলে তার ওপর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অনেক সময় এ চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য অনেক গ্রাহককে জরিপানা সহ জেলে যাওয়ার
মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এজন্য আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে যাতে যুক্তি যেন
ভঙ্গ না হয়।
চুক্তি ভঙ্গ না করার আগে যদি ঋণ পরিশোধ করা হয় তাহলে, ঋণ পরিষদের কিছু
শর্তাবলী আছে যেগুলো এখন আমরা জানবো। প্রথমে আছে, নির্ধারিত সময়সীমার
মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সেটি যেকোনো মাধ্যম হতে পারে যেমন নির্দিষ্ট
মাসিক কিস্তি বা নির্দিষ্ট সময়ে শোধ করা। দ্বিতীয়ত হচ্ছে সুদ প্রদান করা,
মূলত টাকার সাথে চুক্তি করার সময় আপনাকে বার্ষিক কিছু সুদের হার ব্যাংক
প্রদান করে থাকে এবং সেটি মূল টাকার সাথে পরিশোধ করতে হবে। জামানত রক্ষা
কোন কারণে যদি রোম পরিষদ না হয় তাহলে ব্যাংক জামানতের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধ
করার অধিকার রাখে।
অতিরিক্ত জরিমানা, কোন গ্রাহক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রোন শোধ না করে
তাহলে ব্যাংক অধিকারের জরিমানা আরোপ করে থাকে। সেটি এখন ব্যাংকের ওপর নির্ভর
করে যে তারা কত টাকা আরোপ করবে। চুক্তি ভঙ্গের শাস্তি, চুক্তির সময় অনুযায়ী
বা চোখটি নিয়ম অনুযায়ী যদি টাকা পরিষদ না হয় তাহলে ব্যাংক গ্রাহকের উপর
আইনে পদক্ষেপ নিতে পারে। সংক্ষেপে বলা যায়, ঋণ চুক্তি হলো ব্যাংকের দেওয়া
টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা, আর পরিষদের শর্তাবলী সে চুক্তি নিয়মকানুন।
ঋণ পরিশোধ না করার সাধারণ কারণসমূহ
এখন আসি, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পর সবাই কিন্তু সময় মত পরিশোধ করতে পারে
না। এর পেছনে অনেক সমস্যা হতে পারে, যেমন: নানা আর্থিক সমস্যা, ব্যক্তিগত
সমস্যা ও সামাজিক সমস্যার মতো কারণ হয়ে থাকে। আজকের সেই প্রধান কারণ তুলে
ধরবো যেগুলোর কারণে সবাই সময় মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। তো চলেন শুরু করা
যাক।
- আয়ের অস্থিরতা-অনেক সময় অনেকে চাকরি হারায়, ব্যবসা ক্ষতি হয় বা কৃষিতে লোকসান হলে শোধ করা কঠিন হয়ে যায় তখন আমাদের ঋণ পরিশোধ করতে সমস্যা হয় এরকম কিছু যদি সমস্যা হলে আমরা ঋণ পরিশোধ করতে পারিনা।
-
অতিরিক্ত ঋণের চাপ-একাধিক ব্যাংক বা এনজিও থেকে যদি একসাথে ঋণ নেই, তাহলে
ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যায়। এ কারণেও অনেকে সময় মত ঋণ পরিশোধ করতে
পারে না।
-
অসুস্থ ও চিকিৎসা খরচ-দীর্ঘমেয়াদী রোড বা বড় ধরো চিকিৎসার বের করে
নিয়ে অনেকে ঋণ পরিশোধ পিছিয়ে ফেলে। যা চুক্তির বাইরে হয়ে যায় যার
কারণে ঋণ পরিশোধ করা হয় না।
- প্রাকৃতিক যুদ্ধ-বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্প বা অগ্নিকান্ডের এর মত চিকিৎসায় ব্যয়ের কারণে রং পরিশোধ করা হয় না। এ কারণে অনেকে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারে না।
-
অপরিকল্পিত ব্যয়-অপ্রকল্প বলতে বোঝায়, প্রয়োজন ছাড়া ব্যয় অনেক সময়
বিলাসী জীবন যাপন করার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় হয়ে যায় যার কারণে কিস্তি
দেওয়ার মতো অর্থবষ্টিত থাকে না। এই কারণে ঋণ পরিশোধ করতে পারে না।
-
সুদ ও জরিমানার বোঝা-বিলম্বিত কিস্তির কারণে ও জরিপানা বাড়তে থাকা
কারণে, গ্রাহকের আরো চাপে পড়ে যায় এবং একটি রেখে আরেকটি না দেওয়ার
কারণেই ঋণ পরিশোধ করতে পারে না।
-
আইন বা নীতিগত পরিবর্তন-অনেক সময় সরকারি নীতি পরিবর্তনের কারণে ব্যবসায়
ক্ষতি হয় এবং ক্ষতি হওয়ার কারণে আয় হয় না। আয় না হওয়ার কারণে
গ্রাহক সময় মতো ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যায়। এই কারণে রং পরিশোধ করতে
পারেনা।
ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি ও পরিণতি
এখন আসি এই পোষ্টের মেন বিষয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি-ব্যাংক থেকে
ঋণ নেওয়ার পর নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধ না করলে ক গ্রাহকের ব্যাংক
বিভিন্ন শাস্তির সম্মুখীন করেন। প্রথমেই ব্যাংক অধিকারের সুদ ও জরিমানা আরোপ
করে, জারিনের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে এবং গ্রাহক পরিশোধ করতে অস্বস্তি বোধ
করেন। এরপর আইনি নোটিশ পাঠানো হয় এবং গ্রাহকের ওপর প্রয়োজনে মামলা করা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে দিনের বিপরীতে রাখা আমানত যেমন, জমি, বাড়ি বা গাড়ি ব্যাংকের
অধীনে নিয়ে নেয়।
এছাড়াও বড় অংকের ঋণ নেই তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়ে
থাকে এবং তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও সীমাবদ্ধতা আসে। যদি আপনি সময় মতো ঋণ
পরিশোধ না করেন তাহলে আপনার ওপর মামলা সহ জেলও হতে পারে। আবার শুধু শাস্তি
নয়, অনেক সময় ঋণ পরিশোধকারী অপর দীর্ঘমেয়াদী কঠোর পরিনিতি আরোপ করা হয়।
সময়মত ঋণ পরিশোধ না করলে গ্রাহকের ক্রেডিট রেটিং নষ্ট করে ফেলে, ফলে
ভবিষ্যতে নতুন রিং নেওয়া প্রায় অসম্ভব বলা যায়। ব্যবসা বা ব্যক্তিগত
হয়।
ফলে সমাজে খুব খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এছাড়াও ব্যাংক থেকে প্রতিনিয়ত চাপ
প্রয়োগ, প্রতিনিয়ত নোটিশ ও মামলার কারণে মানসিক অশান্তি দেখা দেয়। যা
মানুষকে ভিতর থেকে ধ্বংস করে ফেলে। মানুষ তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। সংক্ষেপে বলা যায়,ঋণ
না শোধ করলে শুধু শাস্তি নয় বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নীতি বাচক প্রভাব
ফেলে।
আইনগত ব্যবস্থা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত প্রক্রিয়া
এখন আসি,ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি-এর আইনাগত ব্যবস্থা। ঋণ পরিশোধ না
করার ক্ষেত্রে প্রথমে ব্যাংক গ্রাহককে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়ে থাকে। এ
নোটিশে বলা থাকে যে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। যদি গ্রাহক
এটি মানতে অস্বীকার করে, তবে ব্যাংক আদালতে একটি মামলা জারি করে। আদালতে
মামলা জারি করার পর আদালতের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকের দায় এবং
যাচাই-বাছাই করা হয়। প্রয়োজন হলে ঋণ গ্রহণকারী সম্পত্তি দখল করার নির্দেশ
দিয়ে থাকে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি আইনি ব্যবস্থার উপর প্রচলিত হয়।
এটি নিশ্চিত করে যে ব্যাংক তার অর্থ আদায়ের জন্য আইনি নিরাপত্তা পেয়ে থাকে।
এখন আসি সম্পত্তি দখল ও প্রাপ্ত প্রক্রিয়া। আইনগত আদর্শের পর ব্যাংক
গ্রাহকের জামানতকৃত সম্পত্তি দখল করা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দখলকৃত সম্পত্তির
মধ্যে থাকতে পারে বাড়ি, গাড়ি জমি বা গ্রাহকের অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ।
এরপর ব্যাংক সে সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে এবং বিক্রি করার পর
যে অর্থ পায় তা দিয়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করে থাকে। যদি সম্পত্তি বিক্রি
করার পরও ব্যাংকের ঋণ পুরোপুরি ভাবে পরিষদ না হয় তখন ব্যাংক আইনি ব্যবস্থা
চালিয়ে বাকি অর্থ আদায় করে নেয়।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংক তার আত্মিক ক্ষতি পূরণ করে এবং ঋণ পরিশোধ না
করা গ্রাহকে তার দায় বদ্ধতার বিষয়ে সতর্ক করে দেয় ব্যাংক। সংক্ষেপে বলা
যায়, শুধু যে আইনি ব্যবস্থা নেবে সেটি নয় আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে যদি আমরা
ঋণ পরিশোধ না করতে পারি, তাহলে পরবর্তীতে আমাদের সম্পত্তি দখল করার
প্রক্রিয়া হতে পারে। তাই সবাইকে বলব অবশ্যই সময়মতো ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ কর,
তাতে আপনিও ভালো এবং সবারই ভালো হবে।
ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের দায়িত্ব ও সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা
এখন আমরা জানতে চলেছি গ্রাহকের প্রতি ব্যাংকের দায়িত্ব এবং গ্রাহকের
সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা। তো চলুন শুরু করা যাক। প্রথমে জানবো ব্যাংকের প্রতি
গ্রাহকের দায়িত্ব কি কি? ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক শুধুমাত্র টাকা জমা রাখা বা
ঋণ নেওয়ার সীমাবদ্ধ নয়। একজন গ্রাহককে ব্যাংকের প্রতি তার দায়িত্ব সচেতন
ভাবে পালন করতে হয়। এর মাধ্য অন্যতম হলো সময় মতো রিং পরিশোধ করা, যাতে
ব্যাংকে আর্থিক ক্ষতি না হয়। এছাড়াও গ্রাহকের সঠিক তথ্য, সঠিক সেবা যেমন
পরিচয়, ঠিকানা, আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য সঠিক দিতে হয়।
ব্যাংকিং লেনদেনের নিয়মাবলী মেনে চলা, কিস্তি এবং অন্যান্য অর্থ প্রদান সময়
মত করা ব্যাংকের চুক্তি নীতিমালা অনুযায়ী আচরণ করা ইত্যাদি অন্তত
গুরুত্বপূর্ণ যা প্রতিটি গ্রাহকের দায়িত্ব। এবার আমরা জানবো গ্রাহকের
সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা। সচেতন গ্রাহক শুধু ব্যাংকে সহায়তা করেনা, বরং নিজের
আর্থিক নিরাপত্তা ও নিশ্চিত করে। নিয়মিত একাউন্ট পর্যবেক্ষণ করা, অনধিকার
লেনদেন মিশ্রিত করা, ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়ীর আর্থিক পরিকল্পনা করা এবং
অপ্রয়োজনীয় রুম থেকে নিজেকে বিরত থাকা সচেতনতার মূল কারণ।
এছাড়াও ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা, লোন নেওয়ার আগে ঝুঁকি ও শর্তাবলী
ভালোভাবে বোঝা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ গ্রহণ করাও জরুরী। এছাড়াও
সচেতনতা শুধুমাত্র ব্যাংকের প্রতি দায়বদ্ধতা নয়, বরং ব্যক্তিগত ও সামাজিক
স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করে। সংক্ষেপে বলা যায়, ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের
দায়িত্ব থাকা খুবই দরকার, এতে করে ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে সম্পর্ক ভালো
থাকে। পরবর্তীতে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে গেলে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে
হয় না। পাশাপাশি সচেতনতারাও প্রয়োজন, কারণ সচেতন থাকলে কখনো সমস্যার
সম্মুখীন হতে হয় না।
ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা ও সামাজিক প্রভাব
এখন আসি এই পোষ্টের শেষ টপিক ভবিষ্যতে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা ও সামাজিক
প্রভাব সম্পর্কে। যা এই পোষ্টের শেষ বিষয়। তো চলুন জানা যাক ভবিষ্যতে
ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কি কি সুবিধা ও অসুবিধা এবং সামাজিক প্রভাবের সম্মুখীন
হতে হবে আমাদেরকে। ঋণ যারা পরিষদ করে না বা নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে
যারা ব্যর্থ হয় তাদের ভবিষ্যতে নতুন কোন ঋণ নেওয়ার সময় অনেক অসুবিধা
সম্মুখীন হতে হয়। অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট হিস্ট্রি পরীক্ষা
করে এবং যদি নেগেটিভ রেকর্ড থাকে তাহলে নতুন ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে
না।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা সম্প্রসারণ, বাড়ি নির্মাণ, শিক্ষা বা জরুরী চিকিৎসার
জন্য ঋণ নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এছাড়াও গ্রাহককে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে
হতে পারে বা কঠিন শর্ত মেনে চলতে হতে পারে, যা আর্থিক চাপ বাড়িয়ে দেয় এবং
গ্রাহকের বড় অসুবিধা তৈরি করে। এখন আসি সামাজিক প্রভাব, ঋণ নিয়ে ঋণ না
দেওয়ার ফলে আর্থিক ক্ষতি হয় না বরং সামাজিক ও মানসিক প্রবাহ মারাত্মক হয়।
সমাজে ও পরিবারের মধ্যে একজনকে দায়িত্বহীন বা অযোগ্য হিসেবে দেখা দিতে পারে।
ব্যবসা বা পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে একটি ব্যবসায়িক সুনাম নষ্ট করে এবং ব্যবসার
মধ্যে বিশ্বাস হারায়।
দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিপন্ন
হতে পারে। যার ফলে নিরাপত্তা ঘানি হয়। ঋণ নিয়ে রুন না দেওয়ার ফলে ব্যক্তি
শুধু আর্থিক নয়, সামাজিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ঋণ গ্রহণ
কারীর ওপ র ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই, আমাদের সবার উচিত প্রতিনিয়ত ব্যাংকের
ঋণ পরিশোধ করা এবং ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা।
শেষ কথা:ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি
এখন আসি আমরা মেইন কথায়, আমরা যদি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করি এটি যেমন
আমাদের নিজেদেরকে ক্ষতি করে তেমনি আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কেউ ক্ষতি সাধন
করে। কারণ ব্যাংকের টাকার মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে।
আমরা যদি ব্যাংকের প্রতিনিয়ত ঋণ পরিশোধ না করে থাকি তাহলে ব্যাংক সেটি
দেশের অর্থনীতির কাজে প্রভাবিত করতে পারবে না। আমাদের সবার উচিত নিয়মিত
নিয়মিত ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা, তা না হলে আমরা উপরে পড়ে এসেছি যে এর
পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
যা আমাদের আর্থিক থেকে শুরু করে সামাজিক, মানসিক ও ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক
প্রভাব ফেলে। আমরা যদি ভবিষ্যতে ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে
অনেক অসুবিধা সম্মুখীন হতে হয়। তাই সকলের উচিত, সঠিক নিয়মে এবং সঠিক
সময়ে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করা। এতে করে আমাদের দেশের অর্থনীতি
যেমন সুষ্ঠু ও সুন্দর থাকবে তেমনি আমাদের পরিবার, সামাজিক, ব্যক্তিগত ও
মানসিক পরিস্থিতি সমৃদ্ধ থাকবে।
লাইফ ব্লেন্ড আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url